Pages

Sunday 2 December 2018

মযালেরিয়া


১) ম্যালেরিয়া কী ?

উত্তরঃ Protozoa উপরাজ্যের Apicomplexa পর্বের অন্তর্গত Plasmodium গনের পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত এক ধরনের মারাত্বক জ্বর রোগ ।

২) পরজীবী বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ যে সকল জীব জীবন ধারনের জন্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অন্য প্রজাতিভুক্ত জীবের দেহে বাস করে উক্ত জীবের ক্ষতিসাধন করে নিজে উপকৃত হয় তাদের পরজীবী বলে ।

৩) পোষক বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ যে সকল জীবদেহে পরজীবী বসবাস করে পুষ্টিদ্রব্য গ্রহন করে পুষ্ট হয় তাকে পোষক বলে । যেমন-ম্যালেরিয়া পরজীবী

৪) নির্দিষ্ট পোষক বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ যেসব পোষকে পরজীবী তার যৌন জনন সম্পন্নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দশা অতিবাহিত করে তাকে নির্দিষ্ট বা প্রাথমিক পোষক বলে । যেমন-ম্যালেরিয়া পরজীবীর প্রাথমিক পোষক স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ।

৫) অন্তবর্তী পোষক বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ যেসব পরজীবী পোষকের দেহে অযৌন জনন সম্পন্নের মাধ্যমে লার্ভা দশা অতিক্রান্ত করে তাকে অন্তবর্তী বা গৌন পোষক বলে । যেমন-ম্যালেরিয়া পরজীবীর অন্তবর্তী পোষক মানুষ ।

৬) হেপাটিক সাইজোগনি বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মানুষের যকৃতে ম্যালেরিয়া পরজীবীর বহুবিভাজন প্রক্রিয়ায় অযৌন জননকে হেপাটিক সাইজোগনি বলে । এর দুটি পর্যায় রয়েছে-১) প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি ২) এক্সো এরিথ্রোসাইটিক সাজোগনি ।

৭) মযালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্ত স্বল্পতার কারন উল্লেখ কর ?

উত্তরঃ কারন সমুহ নিন্মরূপ –
      পরজীবী কতৃক সৃষ্ট হিমোলাইসিন লোহিত রক্ত কনিকার বিগলন ঘটায়।
      আক্রান্ত প্লীহা থেকে লাইসোলেসিথিন নামক যে রস নিঃসৃত হয় তা লোহিত কনিকাকে ধ্বংস করে।
      লোহিত রক্ত কনিকা থেকে মেরোজয়েট বের হওয়ার সময় কনিকা ধ্বংস হয় ।
      ম্যালেরিয়া রোগাক্রান্ত রোগীর যকৃত আক্রান্ত হওয়ার কারনে কনিকা সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয় ।

৮) স্পোরোগনি কী ?

উত্তরঃ মশকীর ক্রপের প্রাচীরে উওসিস্টের অযৌন জননকে স্পোরোগনি বলে ।

৯) রোজেট কী ?

উত্তরঃ পরিনত সাইজন্টে বহুবিভাজন ঘটে ১২-১৮ টি গোল বা ডিম্বাকার মেরোজয়েট সৃষ্টি করে । এগুলো পাপড়ির মতো দুটি স্তরে সাজানো থাকে, পরজীবীর এ অবস্থাকে রোজেট বলে ।

১০) সিগনেট রিং বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ ট্রফোজয়রটের অভ্যন্তরে একটি গহ্বর সৃষ্টি হয়ে ক্রমশ তা বড় হয়ে সাইটোপ্লাজমকে পরিধির দিকে সরিয়ে দেয় এবং নিউওক্লিয়াসও একপাশে সরে যায় । পরজীবীকে তখন পাথর বসানো আঙ্গটির মত দেখায় , একেই সিগনেট রিং বলে ।

১১) সাইজণ্ট কী ?

উত্তরঃ বহ নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট ম্যালেরিয়া পরজীবীর দশাকে সাইজন্ট বলে ।

১২) হিপনোজয়েট বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মানবদেহে প্রবেশিত সমস্ত স্পোরোজয়েটই যকৃৎ পর্যন্ত পৌছতে পারে না । কিছু স্পোরোজয়েট যকৃৎ কোষে বৃদ্ধি না পেয়ে বরং সুপ্তাবস্থায় বিরাজ করে । যকৃতকোষে স্পোরোজয়েটের এই সুপ্তাবস্থাকে হিপনোজয়েট বলে ।

১৩) পাইরোজেন কী ?

উত্তরঃ রক্তরসে ম্যালেরিয়া পরজীবীর মেরোজয়েট ছড়িয়ে পড়লে তাকে প্রতিহত করতে শ্বেত রক্তকনিকা প্রচুর পরিমানে যে রাসায়নক পদার্থ ক্ষরন করে তাকে পাইরোজেন বলে ।

১৪) সাইজোগনি বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মানবদেহে ম্যালেরিয়া পরজীবীর অযৌন জননকে সাইজোগনি বলে । মানুষের যকৃতকোষ ও লোহিত রক্তকনিকায় এই চক্র সংঘটিত হয়।

১৫) গ্যামেটোগনি বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মশকীর ক্রপের ভেতরে সংঘটিত ম্যালেরিয়া পরজীবীর যোন জননচক্রকে গ্যামেটোগনি বলে ।

১৬) স্পোরোগনি বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মশকীর ক্রপের বহিঃপ্রাচীরে সনহঘটিত ম্যালেরিয়া পরজীবীর অযৌন জননকে স্পোরোগনি বলে ।

১৭) বায়োলজিক্যাল ভেক্টর বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ যে প্রানী ( বিশেষ করে পতঙ্গ বাহক) কোন পরজীবীকে এক পোষক থেকে অন্য পোষকের দেহে বহন করে নিয়ে যায় এবং অপর পোষকে সঞ্চারিত করার আগে ভেক্টরের দেহে পরজীবীর বংশবৃদ্ধি ঘটলে সেই ভেক্টরকে বায়োলজিক্যাল ভেক্টর বলে।

১৮) কেমোট্যাক্সিস কী ?

উত্তরঃ কোন রাসায়নিক উদ্দীপকের পভাবে কোন জীব বা জননকোষের চলন।

১৯) ক্রিপ্টোমেরোজয়েট বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ সাইজিন্টের প্রতিটি নিউক্লিয়াসকে ঘিরে সাইটোপ্লাজম জমা হয়ে যে নতুন কোষের সৃষ্টি করে তাদেরকে ক্রিপ্টোমেরোজয়েট বলে ।

২০) ক্রপ অঞ্চল কী ?

উত্তরঃ মশকীর গ্রাসনালির পিচন দিকে অবস্থিত থলির মত একটি স্ফীত অংশ ।

২১) এক্সফ্লাজেলেশন বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ ক্রপের অভ্যন্তরে মাইক্রোগ্যামেটের দেহটি সরু ফ্লাজেলাযুক্ত হয় এবং মাইক্রোগ্যামেট সৃষ্টি করে । ক্রপের গহ্বরে ম্যালারিয়া পরজীবীর স্পার্মাটোজেনেসিসের এ বিশেষ প্রক্রিয়াকে এক্সফ্লাজেলেশন বলে ।

২২) ফেব্রাইল পারঅক্সিজম কী ?

উত্তরঃ ম্যালেরিয়া জ্বরের ক্ষেত্রে শীত , উত্তাপ , ঘর্মাবস্থা এই তিনটি অবস্থাকে একত্রে ফেব্রাইল পারক্সিজম বলে ।

২৩) উওকিনেট বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মশকীর রক্ত শোষনের ১২-১৪ ঘন্টা পর গোল ও নিশ্চল জাইগোটটি কীটের মত লম্বাটে ও সচল হয়ে ওঠে । তখন একে উওকিনেট বলে ।

২৪) উওসিস্ট বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ মশকীর ক্রপের এপিথেলিয়াম ও বহিঃস্থ পেশি স্তরের মাঝখানে উওকিনেট একটি পাতলা , নমনীয় সিস্ট আবদ্ধ হয়ে গোলাকার ধারন করে , এই অবস্থায় পরজীবীটিকে উওসিস্ট বলে ।

২৫) জনুক্রম বলতে কি বুঝ ?

উত্তরঃ কোন জীবের জীবন ইতিহাসে অযৌন ও যৌন জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলে ।

২৬) এনোফিলিস মশকীর কোন ৬ টি প্রজাতি ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার ঘটায় ?

উত্তরঃ Anopheles culicifacies , A. stephensi , A. fluviatilis , A. dirus , A. sundaicus , A. minimus .

২৭) ম্যালেরিয়া পরজীবীর নামগুলি লিখ ।

উত্তরঃ Plasmodium vivax ,Plasmodium malariae,Plasmodium ovale, Plasmodium falciparum.

২৮) কেবল স্ত্রী মশাই এ রোগ ছড়ায় কেন ?

উত্তরঃ স্ত্রী মশকীর ডিম্বাণুর পরিস্ফুটনের জন্য উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রানীর রক্ত প্রয়োজন । তাই কেবলমাত্র স্ত্রী মশকীরাই রক্ত পান করে এবং জীবাণুর বিস্তার ঘটায় । পুরুষ মশারা ফুলের মধু বা অন্যান্য উৎস থেকে খার সংগ্রহ করে মানুষকে দংশন করে না ।

২৯) অন্য মশকী ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়াউ না কেন ?

উত্তরঃ কিউলেক্স বা এডিস প্রভৃতি মশকীর পরিপাকতন্ত্রে ট্রিপসিন নামক বিশেষ ধরনের এনজাইম থাকে যা জীবাণুর গ্যামেটোসাইটগুলোকে নষ্ট করতে সক্ষম । তাই এনোফিলিস ব্যাতীত অন্য কোন মশকী এ জীবাণুর বিস্তার ঘটাতে পারে না।

৩০) ম্যালেরিয়া পরজীবীর ক্ষেত্রে জনুক্রমের তাৎপর্য বিশ্লেষন কর ।

উত্তরঃ ১) জীবাণুর প্রজাতীর ধারাকে অক্ষুন্ন রাখে ।
        ২) জীবাণুর জিবনীশক্তিকে ফিরিয়ে আনে ।
         ৩) জীবাণুর বিস্তৃতিতে সহায়তা করে 
          ৪) জীবাণুর জীবন প্রবাহকে সহজতর করে ।