Pages

Tuesday, 16 February 2016

"মনের ক্যানভাসে কিছু রোমাঞ্চকর স্মৃতি"


"মনের ক্যানভাসে কিছু রোমাঞ্চকর স্মৃতি"
নদীর স্রোতের মত হৃদয়ের আঙ্গিনায় ভেসে বেড়ায় আজও স্মৃতি বিজরিত আনন্দঘন সেই দিনগুলি।জীবনের বর্নিল পথ খুঁজতে ১৯৯১ সালে এসেছিলাম আনন্দমোহন কলেজের প্রানীবিদ্যা বিভাগে।আনোয়ার মালিক স্যার,জয় গোপাল স্যার,সাইফুল স্যার,নজরুল স্যার,মজিদ স্যার,সুব্রতনন্দী স্যার, সুফিয়া বুলবুল ম্যাডাম,মনোয়ারা ম্যাডাম,বিলকিস ম্যাডাম,নারগিস ম্যাডামদের কঠোর শাসন আর অপ্রত্যাশিত ভালবাসা নিয়ে শুরু হয়েছিল সন্মুখে পথচলা।
ছাত্র হিসাবে কখনোই মেরিটরিয়াস ছিলামনা তবে দুষ্টের শিরিমণী ছিলাম এটা সত্য।শুধু যে দুষ্ট তা নয় এতই বিবেকহীন ছিলাম যে, ক্লাসমেটস এবং সিনিয়র ভাইদের নিয়ে ম্যাডামদের বাসা থেকে তৈরী করে আনা দুপুরের খাবারটুকু পর্যন্ত লুকিয়ে খেয়ে নিতাম আমরা একশ্রেনীর খাদকের দল।পরবর্তীতে একদিন সুফিয়া বুলবুল ম্যাডাম একটি বড় হট বক্স নিয়ে কলেজে আসেন।সেদিন কড়া নজরদারিতে বক্সের কাছেও ভিরতে পারিনি। কিন্তু আল্লাহর কি মহিমা দুপুর একটায় অফিস রুমে ডাক পরল খাদক দলের।যেয়ে দেখলাম হট বক্সের ঢাকনা উলটানো বিরিয়ানীর মৌ মৌ গন্ধে পেটের ক্ষুধা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠ্‌ল, আর তখনই ম্যাডাম ঘোষনা করলেন এগুলি তোমাদের জন্য।লাজ-লজ্জা,বোধ-বিচার ভুলে গিয়ে হুমড়ে পড়লাম, ম্যাডামদের খাওয়া হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করিনি।এই খাদকের দল থেকে আনোয়ার মালিক স্যার থেকে শুরু করে কেহই রেহাই পায়নি এমনকি জয় গোপাল স্যারকেও রমজান মাসে উনার বাসায় ইফতারের দাওয়াত খাওয়াতে হয়েছে।
তেঁতুলের স্বাদ সমৃদ্ব স্মৃতিগুলিতে লবন আর সুগার মিশিয়ে আঁচার বানিয়ে রেখেছিলাম কখনো সুযোগ পেলে বলব বলে।আজ না হয় বলেই ফেলি, আমি যে শুধু দষ্টুমি করেছি তাই নয় অবদানও কিছুটা ছিল যা এখনও অম্লান.১৯৯২ সালে আমার প্রচেষ্টায় ,ক্লাসমেটসদের সহযোগিতায়, স্যার ও ম্যাডামদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিজ্ঞান মেলায় প্রানিবিদ্যা বিভাগ ছিনিয়ে এনেছিল দ্বিতীয় স্থান।ততপরবর্তীতে আমাদের সময়কালে বড়,ছোট সকল বন্ধুরা মিলে বলিবলে ছিনিয়ে এনেছিলাম চ্যাম্পিয়ানশীপ।ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জি এস পদে অংশগ্রহন করে নিজের গদম্বে নেতার ছিল লাগিয়ে হুলো বিড়ালের মত বাঘের মাষী সেজেছিলাম।যদিও সেই নির্বাচনে আমি জামানত হারিয়েছিলাম।
এই বিভাগে আমার অন্তরের অন্তস্থলের একজন বন্ধু ছিল সালাম ভাই।প্রেক্টিক্যালের এমন কোন ইন্সট্রুমেন্ট ছিলনা যা আমার বাসায় ছিলনা।কিনেছি?না,চুরি করেছি?না,সালাম ভাইয়ের সাথে শল্লা-পরামর্শের মাধ্যমে চুপি চুপি নিয়ে এসেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম আমার কিছু ক্লাসমেটস ছাড়া আর কেহ হয়ত ব্যাপারটি জানে না।কিন্তু অনার্স পরীক্ষার পর জয় গোপাল স্যার যখন ডেকে বললেন মিজান "তোমার নিকট কলেজের এক সেট ইন্সট্রুমেন্ট আছে সালাম তোমার বাসায় যেয়ে
নিয়ে আসবে"।সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম স্যার জানত এবং অন্তর থেকে আমাকে কতটুকু ভালবাসত।নিয়েই গিয়েছি উনাদের কাছ থেকে মুঠি মুঠি করে অথচ একবারও খবর নেইনি উনারা কেমন আছেন।কতটুকু স্বার্থপর আমি!
আজ স্মৃতির বাজারে মনের গুপ্ত কথাগুলো হতে চায় উন্মুক্ত।আর প্রেম সে ত শুধু চেষ্টার অতীত কখনো সফলতার মুখ দেখেনি।সাবান আর কসমেটিক্স দিয়ে কত হাজারবার নিজেকে পরিষ্কার করেছি কিন্তু স্কিনের কালারটি পরিবর্তন করতে পারিনি বলে প্রেমটা রয়ে গেছে প্রানীবিদ্যা বিভাগের করিডোরে আজও অচেনা।হৃদয়ের ময়নাতদন্তের রিপোটে লেখাছিল "প্রেম ভাগ্য শনির দশা প্রাপ্ত"।
স্বপ্নের লাটাই ঘোরাতে ঘোরাতে পেরিয়ে এসেছি প্রানি বিজ্ঞান বিভাগের বর্ধিত দরোজা।স্যার,ম্যাডাম, সিনিয়র এবং জুনিয়র ভাই বোনদের মুখের হাসি আর ব্যবহারের আন্তরিকতা আমার এই সংবেদনশীল হৃদয়কে এখনো মাঝে মাঝে আন্দোলিত করে।সময়ের ক্ষুধার্থ ছোবলে অর্থ-বিত্ত আর পরিবারের নেশায় কখনো খবর নেয়া হয়নি কে কেমন আছে বা আছেন।আজ ৪৫ এসে ঘুরে তাকিয়ে দেখি কতটা মোহ আর আবেগ দিয়ে এখনো ভালবাসে আমার সিনিয়র,জুনিয়র সকল ভাই বোনেরা।ছোট বেলায় পড়েছিলাম"প্রান থাকলে প্রানি হওয়া যায় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হওয়া যায়না"।আমি আর কবে মানুষ হব!

No comments:

Post a Comment