Pages

Friday, 19 February 2016

"হৃদয়ের প্লেটফ্রমে চুইঙ্গামের মত লেগে থাকা কিছু স্মৃতিকথা"

আশা-আকাঙ্খার দোলচালে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় হারিয়ে ফেলেছিলাম জীবনের সত্যিকারের আনন্দমূখর দিনগুলি।প্রানের মেলার প্রশান্তিকর হাওয়ায় স্মৃতির বাজারে এখন প্রানিবিদ্যা বিভাগ যেন এক তরতাজা রজনীগিন্ধার ঝাড়।
স্মৃতির সমুদ্রে আজ ভেসে উঠে ক্লাস ফাকি দিয়ে অডিটরিয়ামের বারান্দায় অবিরাম কার্ড খেলা।মাঝে মাঝে উপস্থিত থাকলেও মেতে উঠতাম ক্লাসমেটসদের সাথে লুকুচুরি আর ছলচাতুড়ির খেলায়।লান্স ব্রেকে আক্রমন চলত অন্যদের খাবারে।তবে আমার নিজস্ব খাবারের ব্যাপারে কখনো এমন হতনা।কারন কি?আমাকে ভয় পেত?না, তা নয়।মিউজিয়াম থেকে সংগৃহীত মৃত মানুষের মাথার খুলিতে চানাচুর-মুড়ি মিশিয়ে খেতাম বলে।হা,হা,হা কতটা গাধা হলে মানুষ এ ধরনের কাজ করতে পারে!

আনন্দঘন পরিবেশে এবং আন্তরিকতার সাথে ব্যবহারিক ক্লাসের মাধ্যমে জ্ঞান বিতরনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় এই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাগন সবসময়ই সচেষ্ট ছিলেন।কত কেঁচো,টিকটিকি,তেলাপোকা ব্যাবচ্ছেদ করতে গিয়ে করেছি শিরচ্ছেদ।খাল,বিল,নদী,নালা,ড্রেনের নোংরা আবর্জনা ঘেটে ঘেটে চিনতে হয়েছে পোকা-মাকড়।যদিও নিজেই নিজের কাছে আজও রয়েছি অচেনা।মাছ কাটতে কাটতে আর খেতে খেতে শিখেছি বিভিন্ন অঙ্গ,অঙ্গতন্ত্র ও হাড়ের নাম।শুকরিয়া এইটুকু যে আমার শরীর কেটে-চিড়ে  শিখতে হয়নি মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্রের নাম। 

স্বপ্ন স্রষ্টা মনটা মাঝে মাঝে হারিয়ে যেত বহুমুখী চাহিদার চোঁখে চোঁখ রেখে।তাই ফুরসত পেলেই ঘুরে বেড়াতাম এবং অবলোকন করতাম নিঃশব্দতার প্রাচীরের ফাটলে,আনাচে কানাচে কতইনা কপোত কপোতির প্রেম চর্চা।ছলনার অন্তরালে বেঁচে থাকা কিছু নিষ্পাপ অন্তরের ক্রন্ধন।মনের অপ্রাপ্ত প্রেমলীলা সাঙ্গ করেছি সিগারেটের নেশায়।কারন সিগারেট আর মেয়ে মানুষ দুটুই হার্টের জন্য ক্ষতিকর।তাই বাধ্য হয়ে বেছে নিয়েছিলাম প্রথমটিকে এবং অক্সিজেনের পরিবর্তে বেদনার কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে পূর্ণ করেছি নিষ্পাপ ফুসফুসটিকে।

ক্লাস ,ব্যবহারিক করতে করতে যখন ক্লান্ত তখন জীবননের একঘেয়েমী কাটাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আনন্দভ্রমনে কক্সবাজার।কোথায় একটু আনন্দ ফুর্তির সাথে ঘুরে বেড়াব তা না, সারাদিন শুধু এটা কূড়াও, ওটা কুড়া্‌ও, প্রিজার্ভ ক্‌র, স্বন্ধ্যায় রিপোর্ট কর।পরে ক্লাসমেটসদের নিকট জানতে পারলাম এই ভ্রমনের নাম ছিল শিক্ষা সফর, নট আনন্দ সফর।
এরই মধ্যে একদিন মহেশখালীতে যেতে হয়েছিল সকালে নাস্তার পর। টয়লেটে যাওয়ার কথা মনে ছিলনা।মহেশখালী যেতে হয়েছিল ট্রলারে চেপে।ট্রলারের গতি যত বাড়তে থাকল সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকল আমার নিন্মচাপ।কি আর করা,কোন রকমে চেপে চুপে ঘর্মাক্ত শরীরে মহেশখালী পৌছেই ট্রলার থেকে লাফিয়ে নেমে  দৌড় কিন্তু বিধি বাম,শুধু বালিয়াড়ী, কোথাও কোন প্রকার আড়াল পেলামনা আমার কষ্টের মুক্তির জন্য।শেষ- মেষ আর টিকতে না পেরে উন্মুক্ত প্লেসেই করলাম বর্জ্যপাত।ইস, সেকি লজ্জা!ভাগ্যিস জাহিঙ্গাটা ছিল, তা না হলে মূল্যবান কাজটুকু কিভাবে সারতাম!

মহেশখালী থেকে ফেরার পর টেকনাফ টু সেণ্টমার্টিন দ্বীপ।এটাকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নাম না দিয়ে বিলাতি কুত্তার দ্বীপ দিলেই মনে হয় ভাল হত।সেখান থেকে  পান্থনিবাস টু চট্রগ্রাম টু ফয়েজলেক। আমি ভেবেছিলাম আমার খালাত ভাই ফয়েজ হয়ত এখানে প্রথমে এসেছিলাম তাই তার নামানুসারে এই লেকের নামকরন করা হয়েছে কিন্তু পরে নোটিসবোর্ড পড়ে জানলাম ভিন্ন কথা।সেখান থেকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসা হল ময়মনসিংহ।বাসায় এসে কখন কিভাবে ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই, বাবার গলার শব্দে হুড়মুড় করে উঠে বসলাম বিছানায়।মনে হল আমি এতক্ষন স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম।যাক বাবা বাঁচা গেল। কিন্ত কলেজে যেয়ে মনে হল আসলে কোন স্বপ্নই দেখিনি।কলজে এ্যাস্কাশন নিয়ে চলছে ডিস্কাশন।আমি ডিস্কাশন করে পেলাম জীবন থেকে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ দিন হারিয়ে ফেলেছি।

স্যার ও  ম্যাডামদের কঠোর শাসনের বেড়াজালে আটকা পড়ে কিছু অন্তত শিখেছিলাম।তা না হলে জীবনটা হয়ত স্পয়েল হয়ে যেত। মনে মনে ভাবি উনাদের কথা যদি সঠিকভাবে পালন করতাম তাহলে আরও ভালভাবে বাঁচতে পারতাম।তাই এখন নিজে নিজেই বলি-
"মনরে মন যখন সময় ছিল তখন বুঝলিনা
এখন চোঁখের পানি ঝড়ালে কোন লাভ হবেনা"।

No comments:

Post a Comment