হাইড্রা নিডারিয়া পর্বের দ্বিস্তরী প্রাণী।গ্রিক পুরানে কথিত আছে যে,গ্রিসে
হাইড্রা নামের নয় মস্তক বিশিষ্ট্ এক কাল্পনিক দৈত্য ছিল।সর্বপ্রথম ১৭০২
খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক হাইড্রা এর বর্ননা করেন।হাইড্রার দেহ মূলত
কেন্দ্রীয় গযাস্ট্রোভাস্কুলার গহবর বা সিলেন্টেরন এবং তাকে ঘিরে দেহপ্রাচীর নিয়ে
গঠিত।হাইড্রা বহুকোষী প্রানী বিধায় এর দেহপ্রাচীরের কোষগুলো এপিডার্মিস এবং
গ্যাস্ট্রোডার্মিস নামক দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে।এই দুটি স্তরের মাঝে মেসোগ্লিয়া
নামক জেলির ন্যায় অকোষীয় স্তর বিদ্যমান।পরিনত হাইড্রার দেহ প্রাচীরের সর্বাপেক্ষা
বাইরের কোষীয় স্তরকে এপিডার্মিস বলে।গঠনগত ও কার্যগত দিক দিয়ে বৈচিত্র্যময় সাত
প্রকার কোষের সমন্বয়ে এপিডার্মিস গঠিত।নিন্মে কোষগুলো গঠন ও কাজ আলোচিত হলঃ
১)Masculoepithelial cell:
গঠনঃ
এই কোষগুলো হাইড্রার বহিঃত্বকের সমস্ত স্থান জুড়ে অবস্থিত।
০কোষগুলো স্তম্বাকার,তবে কতকটা উলটানো T অক্ষরের মত।
০ প্রতিটি কোষের অভ্যন্তরে একটি ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম থাকে।
০ সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কতগুলো গহবর,অণুসূত্র এবং বাইরের প্রান্তের দিকে
অনেকগুলো মিউকাস বস্তু থাকে।
০ প্রতিটি কোষের বাইরের প্রান্ত প্রশস্ত এবং ভেতরের প্রান্ত তুলনামূলকভাবে
সরু।
০ প্রতিটি কোষের বাইরের প্রান্ত পরস্পরের সাথে যুক্ত।
০ কোষের ভেতরের সরু অংশের শেষ প্রান্তে এক বা একাধিক মায়োনিম নামক
সংকোচনশীল তন্তু সম্বলিত পেশী লেজ বিদ্যমান।
০ কর্ষিকাস্থিত কোষগুলো বেশ চড়া ও চ্যাপ্টা।এদের কিনারা পাতলা এবং মধ্যস্থল
পুরু।
কাজঃ
০ কোষের প্রশস্ত প্রান্ত বহিরাবরন সৃষ্টির মাধ্যমে দেহকে বাইরের বিপদ-আপদ
হতে রক্ষা করে।
০ কোষের সরু অংশের পেশী লেজ অণুদৈর্ঘ্য পেশীস্তরের সৃষ্টির মাধ্যমে দেহকে
সংকোচন ও প্রসারন ঘটিয়ে হাইড্রাকে চলনে সাহায্য করে।
০ মিউকাস বস্তুগুলো মিউকাস নিঃসৃত করে হাইড্রাকে কোন কিছুর সাথে আটকে রাখতে
সাহায্য করে।
২)Interstitial cell:
গঠনঃ
০এরা মেসোগ্লিয়া ঘেষে অবস্থিত।
০ এরা ক্ষুদ্র গোলাকার এবং ৫ মাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট।
০ নিউক্লিয়াস বড় ও স্পষ্ট।
০ সাইটোপ্লাজম গাঢ় এবং এতে অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা,রাইবোজোম ও মাইটোকনড্রিয়া
থাকে।
কাজঃ
০ এরা হাইড্রার পুনরুৎ পত্তি,বৃদ্ধি
ও জননাঙ্গ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
০ এরা প্রয়োজনে দেহের যে কোন কোষে রুপান্তরিত হতে পারে।
৩)Nerve cell:
গঠনঃ
০ এই কোষগুলো মেসোগ্লিয়ার সংস্পর্শে অপেক্ষাকৃত ভেতরের দিকে থাকে।
০ প্রতিটি কোষ দেখতে পঞ্চভূজের মত এবং এতে একটি সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস থাকে।
০ কোষের প্রতিটি কোন হতে একটি করে অণূসূত্র প্রসারিত থাকে এবং প্রতিটি
অণুসূত্র শাখান্বিত হয়ে মেসোগ্লিয়ায় স্নায়ু
জালকের সৃষ্টি করে।
০ কোষগুলো অণূসূত্রকের সাহায্যে সংবেদী কোষের পাদদেশে এবং পেশী আবরনী কোষের
অণূসূত্রকের সাথে যুক্ত থাকে।
কাজঃ
সংবেদী কোষ দ্বারা গৃহীত উদ্দীপনার উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করাই স্নায়ু
কোষের প্রধান কাজ এবং বিভিন্ন কোষের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
৪)Sensory cell:
গঠনঃ
০ এই কোষগুলো দুটি পেশী আবরণী কোষের মধ্যবর্তী স্থানে
অবস্থিত।
০ কোষগুলো লম্বা ও সরু,তবে মধ্যভাগ স্ফীত।
০ স্ফীত অংশে একটি বৃহদাকার নিউক্লিয়াস থাকে।
০ প্রতিটি কোষের মুক্ত প্রান্তে কয়েকটি সংবেদী রোম থাকে এবং মেসোগ্লিয়া
সংলগ্ন প্রান্তে কয়েকটি অণূসূত্র থাকে।
০ অণূসূত্র গুলোর সাহায্যে এরা স্নায়ু কোষের সাথে যুক্ত থাকে।
কাজঃ
এরা পরিবেশ হতে উদ্দীপনা গ্রহন করে স্নায়ুকোষে পৌছে দেয়।
৫)Gland cell:
গঠনঃ
০ এই কোষগুলো হাইড্রার পাদচাকতি ও হাইপোস্টোমে থাকে।
০ কোষগুলো স্তম্ভাকার এবং এদের বাইরের দানাদার ও ভেতরের প্রান্ত পেশী
দ্বারা প্রলম্বিত।
কাজঃ
০ পাদচাকতির গ্রন্থি কোষসমূহ গ্যাসের বুদবুদ সৃষ্টি ও ক্ষনপদ বিস্তার করে
চলনে সহায়তা করে।
০ হাইপোস্টোমের গ্রন্থি কোষ নিঃসৃত মিউকাস খাদ্য গ্রহনে সাহায্য করে।
৬)Germ cell:
গঠনঃ
০ এরা দেহের জননাঙ্গে থাকে।
০ এদের শুক্রাণু ক্ষুদ্র,গোলাকার মাথা এবং লম্বা লেজ বিশিষ্ট।
০ ডিম্বাণু বড় ও গোলাকার।
কাজঃ
যৌন জননে অংশ গ্রহন করাই এদের প্রধান কাজ।
৭)Cnidocyte cell:
গঠনঃ
০ এই কোষগুলো হাইড্রার পাদচাকতি ব্যাতীত দুটি পেশী আবরনী কোষের মধ্যবর্তী
স্থানে অবস্থিত।
০ কোষগুলো দেখতে লাটিমের মত।প্রতিটি কোষের মেসোগ্লিয়ার দিক সরু,মধ্য অংশ
স্ফীত এবং বাইরের দিক সরু।
০ প্রতিটি কোষ বহিঃ ও অন্তঃআবরনী দ্বারা আবৃত থাকে।এই দুই আবরণির মধ্যবর্তী
স্থানে সাইটোপ্লাজম ও একটি সুস্পস্ট নিউক্লিয়াস থাকে।
০ কোষের স্ফীত অংশের কেন্দ্রস্থলে অন্তঃআবরণী দ্বারা ঘেরা হিপনোটক্সিন
পূর্ণ এবং প্যাচানো সূত্রক সম্বলিত একটি থলি বা নেমাটোসিস্ট থাকে।
০ থলির অগ্রপ্রান্তের সাথে সূত্রকটি যূক্ত থাকে এবং এর গোড়াতে তিনটি বার্ব
বা কতকগুলো বার্বিউল থাকে।
০ সূত্রক ও থলির সংযোগস্থলে একটি অপারকুলাম থাকে।
০ নেমাটোসিস্টের চতুর্দিকে সাইটোপ্লাজমের একটি সংকীর্ন স্তর থাকে এবং এই
স্তরে কতকগুলো অণূসূত্র জালিকাকারে সজ্জিত থাকে।
০ নিডোব্লাস্ট কোষের মুক্ত প্রান্তের এক পাশে একটু উচু স্থানে একটি নিডোসিল
থাকে।
০ এ ছাড়া নেমাটোসিস্টের সাথে একটি ল্যামেলা যুক্ত থাকে।
গঠন ও কার্যের পার্থক্যের জন্য হাইড্রার দেহে চার প্রকার নেমাটোসিস্ট থাকে-
ক}পেনিট্রান্ট খ}ভলভেন্ট গ}স্ট্রেপটোলিন গ্লুটিনান্ট ঘ}স্টেরিওলিন
গ্লুটিনান্ট।
কাজঃ
শিকার ধরা, আত্নরক্ষা ও চলনে সাহায্য করাই এই কোষের প্রধান কাজ।
No comments:
Post a Comment