নিডারিয়া পর্বের সকল প্রানীর এপিডার্মিসের
পেশী-আবরনী কোষের ফাকে ফাকে নিডোব্লাস্ট কোষ অবস্থান করে।কর্ষিকাতে এদের সংখ্যা
সর্বাধিক এবং পদতলে অনুপস্থিত। কর্ষীকার স্থানে স্থানে ১০-১২টি নিডোব্লাস্ট কোষ
একত্রে থেকে স্ফীত অংশ তৈরী করে,একে নিমাটোসিস্ট বেটারি বলে।নিডোব্লাস্ট কোষ দেখতে
গোলাকার,ডিম্বাকার,নাশপাতি বা পেয়ালা আকৃতির হয়ে থাকে।একটি নিডোব্লাস্ট কোষ
নিন্মলিখিত অংশগুলি নিয়ে গঠিতঃ
১)Cell Covering:
প্রতিটি কোষ দুইস্তর বিশিষ্ট পাতলা আবরন
দ্বারা আবৃত।
২)Cytoplasm:
কোষের মধ্যে দানাদার সাইটোপ্লাজম এবং একটি
বড় নিউক্লিয়াস থাকে।এছাড়া সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন ধরনের সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানু
যেমন-মাইটোকড্রিয়া,গলগি বস্তু,রাইবোসোম ইত্যাদি বিদ্যমান।
৩)Nematocyst:
নিডোব্লাস্ট কোষের স্ফীত অঞ্চলে সূত্রক
ধারনকারী থলি বা ক্যাপসুলটিকে নেমাটোসিস্ট বলা হয়।ইন্টারস্টিসিয়াল কোষের গহবর থেকে
নেমাটোসিস্টের উ পত্তি হয় বলে ধারনা করা হয়।গঠন ও কাজের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী Werner(1965) নিডারিয়া পর্বের প্রানীদেহে ২৩ প্রকারের নেমাটোসিস্ট আবিস্কার করেন।এদের
মধ্যে চার ধরনের নেমাটোসিস্ট হাইড্রাতে পাওয়া যায়।
ক)স্টিনোটিলঃ
> এই ধরনের নেমাটোসিস্ট সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম।এর
ক্যাপসুলটি প্রায় ১৬ মাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট।
> স্বাভাবিক অবস্থায় সূত্রকটি ক্যাপসুলের
ভিতরে প্যাচানো অবস্থায় থাকে,কিন্তু নিক্ষিপ্ত অবস্থায় সূত্রকটি সোজা থাকে।
> সূত্রকের প্রশস্ত গোড়াকে বাট বা স্যাফট
বলে এবং বাটের গোড়ার দিকে বার্ব নামক তিনটি বড় তীক্ষন কাটা থাকে।
> শীর্ষভাগের সরু অংশে বার্বিউল নামক
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাটা তিন সারিতে সর্পিলাকারে বিন্যস্ত থাকে।
> সূত্রকটি শিকারের দেহে অনুপ্রবেশ করে
বলে এদেরকে পেনিট্র্যান্টও বলে।
কাজঃ
> শিকার ধরা,শিকারকে আটকে রাখা এবং আত্নরক্ষার
কাজে ব্যবহৃত হয়।
> শিকারের দেহে হিপনোটক্সিন নামক বিষাক্ত
তরল প্রবেশ করিয়ে শিকারকে দূর্বল করে বা মেরে ফেলে।
খ)ভলভেন্টঃ
> এর ক্যাপসুল নাসপাতির আকৃতির এবং
অপেক্ষাকৃত ছোট,ব্যাস প্রায় ০৭ মাইক্রন।
> সূত্রকটি খাটো,মোটা,স্থিতিস্থাপক এবং
অগ্রপ্রান্ত বন্দ।
> ক্যাপসুলের ভেতরে সূত্রকটি একটিমাত্র
পযাচে গুটানো থাকে।
> সূত্রকটি নিক্ষিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে
স্ক্রুর ন্যায় অনেকগুলো পযাচ গঠন করে।
> এর বাট সুগঠিত নয় এবং বাটে বার্বস ও
বার্বিউল থাকে না।
কাজঃ
> শিকারকে প্যাচিয়ে ধরে রাখতে সাহায্য
করে।
> হাইড্রার চলনে এই সুত্রকটি বিশেষ
ভূমিকা পালন করে।
গ)স্ট্রেপটোলিন গ্লুটিনেন্টঃ
> এদের ক্যাপসুল ডিম্বাকার এবং ব্যাস
প্রায় ০৯মাইক্রন।
> সূত্রকটি লম্বা এবং সূত্রকের দৈর্ঘ্য
বরাবর ছোট ছোট কাটা সর্পিলাকারে বিন্যস্ত।
> সুত্রকটির বাট সুগঠিত নয় এবং সূত্রকের
শীর্ষ উন্মুক্ত।
কাজঃ
> এই সূত্রকটি খাদ্য প্রানীকে চাবুকের মত
আঘাত করে শিকারকে দূর্বল করে ফেলে।
> এছাড়া শিকারকে আটকে রাখতে এবং চলনে
বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ঘ)স্টেরিওলিন গ্লুটিন্যান্টঃ
> এদের ক্যাপসুল সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং
ব্যাস ০৬মাইক্রন।
> এদের বাট সুগঠিত নয় বা অনুপস্থিত।
> সূত্রকটি অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র আনুবীক্ষনিক কাটা যুক্ত।
কাজঃ
> এই ধরনের সূত্রক এক ধরনের আঠালো রস
নিঃসৃত করে শিকারকে আটকে রাখে।
> হাইড্রার চলনেও এর ভূমিকা রয়েছে।
৪)Operculum:
নেমাটোসিস্টের সূত্রক ও ক্যাপসুল একটি ঢাকনা
দিয়ে ঢাকা থাকে।একে অপারকুলাম বলে।
৫)Cytoplasmic Fibrial:
ক্যাপ্সুলের পৃষ্ঠদেশ থেকে কতকগুলো ক্ষুদ্র
পেশিতন্তু উ পন্ন হয়ে সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে এবং পরে সবগুলো তন্তু একত্রিত হয়ে নিডোব্লাস্টের
বৃন্তের মত গোড়ার অংশের মধ্য দিয়ে মেসোগ্লিয়ার সাথে যুক্ত থাকে।এছাড়া একটি মোটা
পযাচানো সুতার ন্যায় অঙ্গ নিডোব্লাস্টের তলদেশ হতে বের হয়ে ক্যাপসুলের সাথে যুক্ত
থাকে,একে ল্যাসো বলে।
৬)Cnidocil:
নিডোব্লাস্ট কোষেড় মুক্ত প্রান্তের একপাশে
অবস্থিত দৃঢ,ক্ষুদ্র ও সংবেদনশীল রোম থাকে,একে নিডোসিল বলে।নিডোসিল সূত্রক
নিক্ষেপের জন্য বন্দুকের ট্রিগারের মত কাজ করে।
নিডোব্লাস্টের কাজঃ
> শিকার ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়।
> চলাচলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
> কোন বস্তুর সাথে দেহকে আটকে রাখতে
সহায়তা করে।
> হাইড্রার আত্বরক্ষার কাজে এই কোষগুলোর
ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
No comments:
Post a Comment