ইকোলজিক্যাল
পিরামিড
ইকোসিস্টেমে পিরামিডের ভূমি হতে শীর্ষস্থান পর্যন্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি স্তর
থাকে।উৎ পাদক শ্রেনী ভূমিদেশের স্তর গঠন করে এবং অনুক্রম অনুসারে ক্রমপর্যায়ে
শাকাশী ও মাংসাশী প্রানীদের স্তর যথাক্রমে বিন্যস্ত থাকে।কোন জীব সম্প্রদায়ের
খাদ্য-শৃংখল সে স্থানের জীবের সংখার পিরামিড গঠন করে।পিরামিডের ভূমি হতে শীর্ষ
দিকে খাদ্যস্তরগুলোকে লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রতি খাদ্যস্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে
জীবের সংখা কমে আসছে।পিরামিডের ভিত্তি রচিত হয় উ পাদকের মাধ্যমে এবং ক্রমান্বয়িক
পুষ্টিস্তরগুলি উপরের দিকে উঠে।অবশেষে সর্বোচ্চ খাদকের মাধ্যমে চূড়া গঠিত
হয়।বিজ্ঞানী এলটন ১৯৩৯ সালে সর্বপ্রথম খাদ্য পিরামিড ব্যাখ্যা দেন।তার মতানুসারে উৎৎ
পাদক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জীবের সংখ্যা,শক্তি,ও ওজন
পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে এবং এদের যদি কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করা হয় তাহলে একটি
পিরামিডের ছকের আকার দাড়ায়।বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন ট্রফিক স্তরে খদ্য-শৃংখলের
বিন্যাস সমন্বিত এ ধরনের ছককে খাদ্য পিরামিড বলে।ইকোসিস্টেমের পিরামিডকে তিন
প্রকারে বর্ননা করা যায়-
১]সংখাভিত্তিক পিরামিডঃ সংখার পিরামিড পুষ্টিস্তরের সংখাভিত্তিক সম্পর্ক
নির্দেশ করে।এই প্রকার পিরামিডে ভুমিতে অবস্থান হল সবুজ উদ্ভিদ,সংখসভিত্তিক
ক্রমপর্যায় অনুসারে ইকোসিস্টেমের অন্যান্য জীবেরা বিন্যস্ত থাকে।এই পিরামিডের
শীর্ষ হতে ভুমি পর্যন্ত ক্রমপর্যায় অনুযায়ী প্রতিটি পুষ্টিস্তরের জীবদের সংখা
ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। উদাহরনসরুপ বলা যেতে পারে যে,শীর্ষশ্রেনীর খাদকের
সংখার তুলনায় তৃতীয় শ্রেনীর খাদকের সংখা অনেক বেশি থাকে।আবার তৃতীয় শ্রেনীর খাদক
অপেক্ষা দ্বিতীয় শ্রেনীর,দ্বিতীয় শ্রেনী অপেক্ষা প্রথম শ্রেনীর খাদকের সংখার
তুলনায় অনেক বেশি হয়।এভাবে উৎ পাদকের সংখা প্রথম শ্রেনীর খাদকের সংখার তুলনায় বেশি
হয়।সংখাভিত্তিক পিরামিডের অনুক্রম অনুসারে প্রানীদের সংখ্যা যেমন কমে আসে তেমনি
তুলনামূলকভাবে তাদের আয়তন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
২]শক্তিভিত্তিক পিরামিডঃ কোন ইকোসিস্টেমের নির্দিষ্ট খাদ্য-শৃংখলের প্রতিটি
ট্রিফিক লেভেলে পুষ্টিস্তরের সর্বমোট শক্তির পরিমানকে নির্দেশ করে। শক্তিভিত্তিক
পিরামিডের ভূমিতে অবস্থিত উৎ পাদক শেনীর শক্তির পরিমান সর্বাপেক্ষা বেশি এবং শীর্ষে
অবস্থিত পুষ্টিস্তরের শক্তির পরিমান সর্বাপেক্ষা কম থাকে।এর কারন হল , একটি
পুষ্টিস্তর হতে অপর একটি পুষ্টিস্তরে শক্তির স্থান পরিবর্তনকালে কিছু পরিমান শক্তি
বিনষ্ট বা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।স্বভোজী উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষন কালে আলোকশক্তির শতকরা
প্রায় ২০ ভাগ গ্রহন করে।আবার শ্বসনকালে নিন্মতম পুষ্টিস্তর হতে উচ্চতম পুষ্টিস্তর
পর্যন্ত শক্তির হ্রাস ক্রমপর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি পুষ্টিস্তর হতে অপর একটি
পুষ্টিস্তরে শক্তির স্থানান্তরকালে স্থৈতিক শক্তির শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ
তাপশক্তিরূপে হ্রাস পায়।সংখাভিত্তিক পিরামিডের ন্যায় শক্তিভিত্তিক পিরামিডেও ভূমি
থেকে শীর্ষ পর্যন্ত উৎ পাদক,প্রথম শ্রেনীর খাদক,দ্বিতীয় শ্রেনীর খাদক এবিং
শীর্ষশ্রেনীর খাদকের পর্যায়ক্রমগুলো বর্তমান থাকে।
৩]জীব ভরের পিরামিডঃএকটা বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খদ্যচক্রের
বিভিন্ন পুষ্টিস্তরের অবস্থিত জীবের ভরের উপর ভিত্তি করে যে পিরামিড গড়ে উঠে
,তাকে জীব ভরের পিরামিড বলে।এখানে,প্রথম পুষ্টিধাপের জীব উপাদান দ্বিতীয় এবং তৃতীয়
পুষ্টিধাপের তৃনভোজী ও মাংসাশী প্রানীদের সমষ্টিগত ওজনের তুলনায় অনেক বেশি।সুতরাং
এ পিরামিডের নিচ থেকে উপরের পুষ্টিস্তরের জীবভর ক্রমশ কম থাকে।কিন্তু পরজীবীদের
বেলায় জীব ভরের পিরামিড বিপরীত মুখী হয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment