নিষেক ও গর্ভসঞ্চার
জাইগোট নামক ডিপ্লয়েড কোষ গঠনের উদ্দেশ্যে যে জটিল প্রক্রিয়ায় শুক্রানু
নিউক্লিয়াস ও ডিম্বানু নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে তাকে নিষেক বলে।ডিম্বাশয় থেকে
ডিম্বপাতের পর ডিম্বানু ফেলোপিয়ান নালীতে প্রবেশ করে ৬-৭ ঘন্টা অবস্থান করে।সে সময়
নিষেক ঘটে।অন্যদিকে,শুক্রানুগুলোর নিষেক ক্ষমতা থাকে প্রায় ৪৮ ঘন্টা।
স্খলিত শুক্রানু ডিম্বানুকে নিষিক্ত করার জন্য লেজের সাহায্যে সাতার কেটে
ফেলোপিয়ান নালীর তরল বেয়ে প্রায় মুক্ত প্রান্তের কাছাকাছি উঠে আসে।একটি ডিম্বানু
নিষেকের জন্য একটি শুক্রানুই যথেষ্ঠ।তা সত্বেও নিষেক নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কয়েক
মিলিয়ন শুক্রানু একটিমাত্র ডিম্বানুকে আক্রমন করে।ডিম্বানু নিঃসৃত ফার্টিলাইজিন
এবং শুক্রানু নিঃসৃত অ্যান্টিফার্টিলাইজিন নামে রাসায়নিক পদার্থের আকর্ষন ও
প্রতিক্রিয়ার ফল হিসাবে শুক্রানুগুলো ঝাকে ঝাকে ডিম্বানুটির চারপাশে ভিড় করে এবং
বাইরের করোনা রেডিয়াটার আবরনকে আক্রমনে লিপ্ত হয়।
ডিম্বানুকে স্পর্শ করা মাত্র শুক্রানুর দেহ থেকে হায়ালুরোনিডেজ নামক এনজাইম
ক্ষরিত হয়ে করোনা রেডিয়াটার কোষগুলোর আন্তঃসংযোগ ভাঙ্গার চেষ্টা করে একসময় সফল
হলেও নিচের জোনা পেলুসিডা আবরন বিগলনের জন্য শুক্রানুর মস্তকের অ্যাক্রোসোমাল টুপি
থেকে স্পার্ম লাইসিন নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়ে জোনা পেলুসিডার কিছুটা অংশ বিগলিত করে
শধুমাত্র একটি শুক্রানু ডিম্বানুটির ভেতরে প্রবেশ করে এবং সাথে সাথেই জোনা
পেলুসিডা পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে যায়,ফলে অন্য কোন শুক্রানু প্রবেশে
বাধাপ্রাপ্ত হয়।মস্তক ছাড়া শুক্রানুর বাকি অংশগুলো ডিম্বানুর সাইটোপ্লাজমে
দ্রবীভূত হয়।
এ সময় ডিম্বানুতে মিয়োসিস বিভাজন সম্পন্ন হয়ে ডিম্বানু নিউক্লিয়াসটি
প্রোনিউক্লিয়াসে পরিনত হয় এবং ডিম্বানুর কেন্দ্রে অবস্থান করে।একই সময় শুক্রানু
নিউক্লিয়াসটি মুক্ত প্রান্ত থেকে ডিম্বানুর কেন্দ্রে অবস্থানরত প্রোনিউক্লিয়াসের সাথে একীভূত হয়ে জাইগোট গঠন
করে।জাইগোট সৃষ্টির সাথে সাথে নিষেক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে।
গর্ভধারনের মাধ্যমে সন্তানের জন্মদান একটি সাভাবিক ঘটনা।সাধারনত ঋতুচক্রের
মাঝামাঝি সময়ে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু ক্ষরিত হয়।স্ত্রী ও পুরুষের মিলনের ফলে
জড়ায়ুতে নিঃসৃত শুক্রানু এবং ওভোলেশনের মাধ্যমে সৃষ্ট ডিম্বানু জড়ায়ু বা
ডিম্বনালীতে মিলনের মাধ্যমে গর্ভধারন বা গর্ভসঞ্চার ঘটে।
No comments:
Post a Comment