Pages

Wednesday 26 March 2014

EYE





যে জ্ঞানেন্দ্রিয় বা সংবেদী অঙ্গ আলোক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বা আলোকের মাধ্যমে দৃষ্টি সঞ্চার করে তাকে চোখ বা দর্শনেন্দ্রিয় বলে।মানুষের চোখ দুটি মাথার দুপাশে বহিঃকর্ণ ও নাসারন্ধ্রের প্রায় মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত।নিন্মে চক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি আলোচিত হলঃ


চক্ষু পল্লবঃ

প্রতিটি চক্ষু একটি ঊর্ধব ও একটি নিম্ন পেশল পল্লব দ্বারা পরিবৃত থাকে।এরা নড়নক্ষম এদের বাইরের কিনারায় লোম থাকে।ধূলাবালি,তীব্র আলো,বাইরের আঘাত হতে রক্ষা করাই ইহার কাজ।

চক্ষুপেশীঃ

প্রতিটি চক্ষু ছয়টি পেশী দ্বারা চক্ষু কোটরে আটকানো থাকে।এগুলো হচ্ছে সুপিরিয়র রেকটাস,ইনফিরিয়র রেকটাস,সন্মুখ রেকটাস,পশ্চা  রেকটাস,সুপিরিয়র অবলিক এবং ইনফিরিয়র অবলিক পেশী।চক্ষুকে কোটরের মধ্যে স্ব-স্থানে ধরে রাখা এবং নড়াচড়ায় সহায়তা করাই চক্ষুপেশীগুলির কাজ।


চক্ষুগ্রন্থিঃ

প্রতিটি চক্ষুতে অশ্রুগ্রন্থি,হার্ডেরিয়ান গ্রন্থি এবং মেবোমিয়ান গ্রন্থি নামে তিন ধরনের গ্রন্থি রয়েছে।অশ্রুগ্রন্থি হতে অশ্রু নামক একধরনের লবনাক্ত ও জীবাণুরোধক তরল নিসৃত হয় যা কনজাংটিভাকে নরম,সিক্ত,পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখে।অপরদিকে হার্ডেরিয়ান ও মেবোমিয়ান গ্রন্থির তৈলাক্ত নিঃসরন অক্ষিপল্লব ও কর্ণিয়াকে পিচ্ছিল রাখে।

অক্ষিকোটরঃ

করোটির সন্মুখ প্রান্তে ক্ষীন প্রাচীর নির্মিত যে দুটি কোটর থাকে তাকে অক্ষিকোটর বলে।এতে দুটি অক্ষিগোলক থাকে।অক্ষিগোলককে সুরক্ষিত রাখা অক্ষিকোটরের কাজ।

অক্ষিগোলকঃ

এটি চক্ষুর প্রধান অংশ।এর ছয় ভাগের এক অংশ বাইরে এবং ছয় ভাগের পাচ অংশ ভেতরে থাকে।এর প্রাচীর তিনটি স্তর দ্বারা গঠিত।

১]স্ক্লেরাঃ

এটি অক্ষিগোলকের বাইরের প্রাচীর,যা পুরু,শক্ত,অস্বচ্ছ এবং তন্তুময় যোজক কলা ও তরুনাস্থি দ্বারা গঠিত।এটি চক্ষু গোলকের আকার দান করে এবং ভিতরের অঙ্গসমূহকে রক্ষা করে।স্ক্লেরার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় কর্ণিয়া এবং কর্ণিয়ার বাইরের দিকে থাকে কনজাংটিভা।

কর্ণিয়া সাধারনত স্বচ্ছ ও সামান্য উদগত যা চক্ষু গোলকের অগ্রভাগকে আবৃত করে রাখে।অপরদিকে কনজাংটিভা স্বচ্ছ ও পাতলা এবং এটি মূলত চক্ষুপল্লবের ভিতরের পর্দার প্রসারিত অংশ।কর্ণিয়াকে বাইরের ধূলা-বালির হাত হতে রক্ষা করাই কনজাংটিভার কাজ।

২]কোরয়ডঃ

এটি স্ক্লেরা স্তরের নীচে অবস্থিত।এটি কৈশিক জালিকাসমৃদ্ধ যোজক কলা এবং কালবর্নের রঞ্জক কোষ সমন্বয়ে গিঠিত।এটি অক্ষিগোলকের পশ্চা  ভাগ হতে স্ক্লেরা ও কর্ণিয়ার সংযোগস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত।এর কর্ণিয়া সংলগ্ন প্রান্তের সাথে আইরিস ও সিলিয়ারী প্রসেস নামক দুটি অংশ থাকে।আলোক রশ্মি প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে তীব্র আলোক রশ্মির আঘাত হতে অক্ষিগোলককে রক্ষা করাই কোরয়ডের কাজ।

আইরিস মূলত কোরয়ডের রুপান্তরিত অংশ।এটি অস্বচ্ছ,রঞ্জিত এবং থালার মত।এটি লেন্সের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।আইরিসের দেহ সংকোচন ও প্রসারনক্ষম বৃত্তাকার ও অরীয় পেশী দ্বারা গঠিত।এর কেন্দ্রের দিকে আলো প্রবেশকারী পিউপিল অবস্থিত।পিউপিলকে ছোট-বড় করে পিউপিলের মধ্য দিয়ে চক্ষুগোলকের ভেতরে আলোকের প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করাই আইরিসের কাজ।

অপরদিকে সিলিয়ারী প্রসেসও কোরয়ডের আরেকটি রুপান্তরিত অংশ।এটি আইরিসের পাদদেশে অবস্থিত।এর ভেতরের দিকে সিলিয়াযুক্ত পেশী ও বাইরের দিকে লেন্স সংযোগকারী সাস্পেন্সরী লিগামেন্ট সহ সিলিয়ারী বডি অবস্থিত।সিলিয়ারী প্রসেসের সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে লেন্সের বক্রতা বাড়ানো ও কমানো নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩]রেটিনাঃ

এটি সবচেয়ে ভিতরের স্তর,যা অক্ষিগোলকের পশ্চা ভাগ হতে প্রায় সিলিয়ারী প্রসেস পর্যন্ত বিস্তৃত।এটি আলোক সংবেদী স্তর।এতে দু ধরনের আলোক সংবেদী স্তর রড কোষ ও কোন্ কোষ থাকে।রডকোষগুলো লম্বাটে ও রডপসিন নামক প্রোটিনযুক্ত এবং মৃদু আলোকে দেখার জন্য দায়ী।কোন্ কোষগুলো কোনাকৃতি ও আয়োডপসিন নামক প্রোটিন যুক্ত এবং উজ্জ্বল আলো ও প্রাথমিক বর্ণ সংবেদী।এটি স্নায়ুকোষ ও স্নায়ু তন্তু সমৃদ্ধ।এর অন্তঃপৃষ্ঠে অন্ধবিন্দু ও পীতবিন্দু অবস্থিত।রড ও কোন্ কোষগুলো বস্তুর প্রতিবিম্ব তৈরিতে সাহায্য করে।

অন্ধবিন্দু রেটিনার পশ্চা ভাগের অন্তঃপৃষ্ঠে অবস্থিত।এর ভেতর দিয়ে অপটিক স্নায়ু রেটিনাতে প্রবেশ করে।উল্লেখ্য যে অন্ধবিন্দুতে রড ও কোন্ কোষ অনুপস্থিত।

অপরদিকে পীতবিন্দু পিউপিলের বিপরীতে অন্ধবিন্দুর সন্নিকটে অবস্থিত।এটি অত্যন্ত অনুভূতিশীল এবং দেখতে অবতল গর্তের মত।এর অবতল অংশের কেন্দ্রে ‘ফোভিয়া সেন্ট্রাসিল’ অবস্থিত।এটি দর্শনীয় বস্তুর প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

লেন্সঃ

চক্ষুগোলকে একটি মাত্র লেন্স থাকে।এটি স্বচ্ছ,দ্বি-উত্তল ও ডিম্বাকার।এটি সাস্পেনসরী লিগামেন্ট দ্বারা আইরিশের পশ্চাতে অক্ষিগোলকের গহবরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।উপযোজনে সয়তা করা ইহার কাজ।

প্রকোষ্ঠঃ

অক্ষিগোলকের অভ্যন্তরে লেন্সের বাইরের দিকে অ্যাকুয়াস হিউমার যুক্ত একটি প্রকোষ্ঠ এবং ভেতরের দিকে ভিট্রিয়াস হিউমার পূর্ণ অন্য আরও একটি প্রকোষ্ঠ থাকে।এরা যথাক্রমে অ্যাকুয়াস ও ভিট্রিয়াস প্রকোষ্ঠ নামে পরিচিত।অ্যাকুয়াস হিউমার আলো প্রবেশে সহায়তা করে এবং ভিট্রিয়াস হিউমার চক্ষু গোলকের আকার বজায় রাখতে সহায়তা করে।

No comments:

Post a Comment